দ্যা আটোম্যান সেঞ্চুরিস পর্ব ১৩
নির্দেশ জারি করেন যে প্রণালি পায় পাপ হওয়ার সময় প্রতিটি জলযান
নিজেদের পাল এবং নোঙ্গর নামিয়ে রাখবে । প্রাসাদের সামনে নোঙ্গর নামিয়ে
রেখে নিজেদের যাত্রা অব্যাহত করার জন্য অনুমতি জোগাড় করবে নির্দিষ্ট
হারে অর্থ প্রদানের বিনিময়ে । নচেৎ কামানের গোলা মেরে তৎক্ষণাৎ তাদের
ডুবিয়ে দেয়া হবে।
মাহমুদ নতুন নতুন সামরিক সরঞ্জামের প্রতি উৎসাহী ছিলেন। হাঙ্গেরিয়ান
ইঞ্জিনিয়ার আরবান কামানের মাধ্যমে তাকে আরো উৎসাহী করে তোলেন এই
বলে যে. এর গোলা বাইজেন্টাইন নয়, ব্যাবিলনের দেয়ালও ফুটো করে দিতে
পারবে। এভাবে আরবানকে বোগাজ কেসেনের ওপর স্থাপন করার মতো
কামান তৈরির নির্দেশ দেন সুলতান, যাতে বসফরাসকে কামানের গোলার
নাগালের মাঝে রাখা যায়।
মাহমুদ এরপর আরবানকে নির্দেশ দেন দুইগুণ বড় একটি কামান তৈরি
করার জন্য। এটি তৈরি শেষ হওয়ার পর দেখা যায় আদ্রিয়ানোপলে সাতশ
সৈন্য ও পনেরো জোড়া ষাড় প্রয়োজন হয় এটি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে
নেয়ার জন্য । শহরবাসীকে সতর্ক করা হয় এর শব্দে ভয় না পাওয়ার জন্য।
তারপর এটি পরীক্ষা করা হয়। দশ মাইল দূর থেকেও এর বিল্ফোরণের শব্দ
শোনা যায় আর গোলাটি এক মাইল ছুটে গিয়ে ছয় ফুট গভীরে গিয়ে থামে শেষ
পর্যস্ত।
এই মহড়ায় উল্লসিত হয়ে সুলতান নির্দেশ দেন রাস্তা ও সেতু মেরামত
করার জন্য যেন বসন্তে এই কামান কনস্টান্টিনোপলের দেয়ালের বাইরে
কোনো অংশে স্থাপনের জন্য নিয়ে যাওয়া যায় । এভাবে আর্টিলারি বাহিনী গঠন
পশ্চিমে পরিচিত থাকলেও পূর্বের মানুষের অজানা ছিল।
১৪৫২ সালের পুরো শীতজুড়ে সুলতান কনস্টান্টিনোপল অবরোধ করার
প্রস্তুতি নিতে থাকেন। বিন্দ্র রজনী কাটিয়ে পরীক্ষা করতে থাকেন নিজের
কৌশল, পরিকল্পনা, আক্রমণের প্রস্তুতি । ছদ্মবেশে শহরে ঘুরে সৈন্যদের ও
সাধারণ মানুষের মনোভাব সম্পর্কে খোঁজখবর নেন।
নিজের সাম্রাজ্যের প্রতিটি প্রদেশ থেকে সৈন্য এনে থ্থেসে জড়ো করেন
সুলতান। যাদের সংখ্যা দীড়ায় প্রা শত হাজারে । এদের মাঝে
জানিসারিসরাই ছিল বারো হাজার। ব্যক্তিগতভাবে তিনি সেনাবাহিনীর
সরঞ্জামের তদারক করেন। রাজ্যজুড়ে কারিগররা তৈরি করতে থাকে বর্ম বর্শা,
শিরক্ত্রাণ, তরবারি, তীর-ধনুক-প্রকৌশলীরা বানায় চাকা ও ব্যাটারি, এই বিশাল
বাহিনীর সামনে কনস্টান্টিনোপলের গ্রিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সংখ্যা ছিল মাত্র
সাত হাজার।
ইউরোপ ও এশিয়া+র দুর্গদ্য় । ডানদিকে রুমেলি হিসারি, বাম দিকে আনাডলু.হিসারি |
আনাডলু হিসারি তৈরি করেন প্রথম বায়েজীদ আর এর ঠিক অর্ধ শতাব্দী পরে ১৪৫১-৫২
এর শীতকালে সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ মাত্র সাড়ে চার মাসে নির্মাণ করেন রুমেলি হিসারি
এবং নামকরণ করেন প্রণালী বিভুক্তকারী” । দুর্গদ্ধয় এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যে
একে অপরের ঠিক বিপরীতে এমন এক পয়েন্টে অবস্থিত যেখানে বসফরাস সবচেয়ে
সংকীর্ণ । ২৩০০ ফুট মাত্র ।
সম্রাট গিওভান্নি নামে জেনোয়ার বিশেষজ্ঞকে চাকরিতে নিয়োগ দান করেন শহর
প্রতিরক্ষার জন্য৷ অস্ত্রের গুনর্বন্টন করা হয়। আর্থিক সাহায্যের জন্য ফাণ্ড গঠন করা
হয়। ব্যক্তি থেকে শুরু করে গির্জা, আশ্রম সব জীয়গা থেকেই এতে অর্থ দান শুরু হয়।
সুলতান সচেতন ছিলেন যে কনস্টান্টিনোপলকে অবরোধ করার পূর্বের
সব অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পেছনে কারণ ছিল শুধু স্থলপথে আক্রমণ ।
বাইজেন্টাইন সব সময় নৌবিদ্যায় পারদর্শী ছিল বিধায় সমুদ্রপথে নিজেদের
প্রয়োজনীয় রসদ আনত। অন্যদিকে তুর্কিরা এশিয়া মাইনর থেকে সৈন্য
পরিবহনের জন্য খ্রিস্টান জাহাজ ব্যবহার করত। ফলে মাহমুদ বুঝতে পারেন
যে নৌশক্তি জড়ো করাও জরুরি । এই চিন্তা থেকেই আজিয়ান জাহাজ ঘাটিতে
খুব দ্রুত একশত পঁচিশটি নৌযান তৈরি করা হয়।
১৪৫৩ সালের বসন্তে গ্রিকবাসী অবাক হয়ে দেখল তুর্কিদের বিশাল
নৌবহর তাদের নিজেদের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। এরপর নিজের
মন্ত্রিপরিষদের কাছে আক্রমণের ও যুদ্ধের পরিকল্পনা খুলে বলে সুলতান ঘোষণা
করেন যে তুর্কিরা এখন নৌশক্তিতে বলিয়ান এবং কনস্টান্টিনোপল ছাড়া অটোমান
সাগ্রাজ্য অসম্পূর্ণ মন্ত্রিপরিষদ একবাক্যে সুলতানকে সমর্থন দেয়।
সুলতান নবীজির সমর্থনও পেয়েছিলেন। অটোমান সেনাবাহিনী এটা
বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে ব্বর্গে যে সৈন্য বিশেষ একটি জায়গা পাবে সে
শহরে প্রবেশ করবে । সুলতান প্রায়ই বলতে থাকেন যে তিনিই সেই রাজকুমার
হবেন যিনি অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে ইসলাম নাম নিয়ে জয়ী হবেন।
অন্যদিকে গ্রিকরা পুরো শীতজুড়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বাধার মুখোমুখি হয়।
ভূমিকম্প, বন্যা, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত, তারা পতন সবকিছু মিলিয়ে অ-ধিস্টানদের
হাতে সাম্রাজ্যের পতনের ঘণ্টা বাজতে থাকে।
বসন্তের শুরুতে সুলতান থ্রেসের মধ্য দিয়ে নিজের বিশাল বাহিনী নিয়ে
অগ্রসর হতে শুরু করেন এবং ২ এপ্রিল ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপলের
দেয়ালের কাছে পৌছান। ভূমির পাশের দেয়ালের একটি কেন্দ্রীয় অংশকে
বাছাই করে সুলতান নিজের হেডকোয়ার্টার তৈরি করান। চারপাশে জড়ো
করেন জানিসারিসদের ৷ পাশেই রাখা হয় সেই দানবীয় কামান। সুলতানের
অপর পাশে ঠিক তার সোজাসুজি জেনোইস সৈন্যদের নিয়ে সম্রাট অবস্থান
নেন। এছাড়াও ভেনেশীয়ান ধিস্টানরাও তীর পক্ষে আছেন প্রমাণ করার জন্য
কূটনৈতিক পর্যায়ে সুলতান কোন আগ্রহ না দেখানোয় এটাই যদি ঈশ্বরের
ইচ্ছা হয় তবে তাই হোক মর্মে সুলতানকে একটি পত্রে জানান সম্রাট ।
এরপর শহরের প্রধান দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। পরিখার ওপর
থেকে সেতু সরিয়ে ফেলা হয়। পবিত্র সপ্তাহজুড়ে থিস্টানরা গির্জাতে প্রার্থনা