দ্যা আটোম্যান সেঞ্চুরিস পর্ব ১০
এভাবে ক্যাটালানদেরকেই দায়ী করা হয় তুর্কিদেরকে ইউরোপে আনার
ক্ষেত্রে। এখানে তারা গ্রিকদের বিরুদ্ধে সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে যুদ্ধ করে।
অবশেষে ক্যাটালানরা যখন থেসালীতে চলে যায়, পেছনে থ্রেস এবং মেসি-
ডোনিয়াতে রেখে যায় বিপুলসংখ্যক তুর্কি যোদ্ধা, যারা যোগাযোগব্যবস্থার
ওপর হামলা করে বিশৃঙ্খলা বাধিয়ে দেয়। তাদের নেতা হালিল নিজেদেরকে
সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে বসফরাস অঞ্চলে স্বাধীন কার্যক্রম চালানোর
‘ণুমতি জোগাড় করে নেয়। কিন্তু যখন গ্রিকেরা এ চুক্তি ভঙ্গ করে এবং
তার্ধদেরকে শিক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়, হালিল এশিয়া থেকে আরো অধিক
মে) নিয়ে এসে তরুণ সম্রাট নবম মাইকেলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। শেষ
পর্মস্ত সমাট তাকে সহায়তা করার জন্য সার্বিয়ান সৈন্যদেরকে ডেকে নিয়ে
‘আসেন।
এরপর থেকে চতুদর্শ শতাব্দীজুড়েই বাইজেন্টাইন দ্বীপ এবং উপকূল
অঞ্চলে এশিয়া মাইনরের বিভিন্ন অংশ থেকে এসে তুর্কিরা হামলা ও লুগ্ঠন কার্য
চালায় । এদের মাঝে কিছু কিছু আক্রমণ অবশ্য বিফল হয়ে যায়৷ যখন তাদের
মাঝেই শত্রুতা গড়ে ওঠে ।
একটা সময় আসে যখন তুর্কিদের মাঝে অনেকেই
িকদের জন্য যুদ্ধ করে, আবার অনেকেই তুর্কিদের বিপক্ষে যুদ্ধ করে। এদের
মধ্যে ছিল তাতাতেরা। কৃষ্ণ সাগরের উত্তরাংশ থেকে এদের আবির্ভাব
হয়েছিল। এদের জাতিগত এঁতিহ্যগত ভিত্তি ছিল তুর্কিদের মতোই । যারা
দক্ষিণ রাশিয়া হয়ে ক্রিমিয়া এবং পশ্চিমে হাঙ্গেরি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
ইতিমধ্যে আয়দিন থেকে তুর্কি জলদস্যুরা আজিয়ার্নের দ্বীপপুঞ্জে আক্রমণ করে
পোপতানত্রিক সেনাবাহিনীকে ক্রুসেডে উদ্বুদ্ধ করে তোলে; যারা স্মূর্না শহর
অধিগ্রহণে করে রেখেছিল।
এসব ধ্বংসযজ্ঞে অটোমানরা নিজেরা কোনো ভূমিকা পালন করেনি । তারা
শুধু তাদের শত্রু অন্যান্য তুর্কি প্রতিবেশী ও গোত্রকে দুর্বল করার কাজ করে
যায়। যদিও বসফরাসের তীরভূমি তাদের অধিকারে ছিল, (কনস্টান্টিনোপলের
ঠিক বিপরীতে ১৩৩০ খ্রিস্টাব্দে) পরবর্তী সাত বছর পর্যন্ত তারা এর পানি পার হয়ে
ইউরোপে যায়নি। তারা তাদের ধৈর্য ও সতর্ক থাকার নীতিতে অটুট থাকে।
সাত বছর পরে তারা ইউরোপে পা রাখে যখন গ্রাণ্ড চ্যালেসসর জন
কাটাকুজিনে, একজন যোগ্য এবং উচ্চাকাজজ্মী নেতা বৈধ বালক-সমাট জন
পালাইয়োলগের বিরুদ্ধে নিজেকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করে, তার প্রয়োজন
ছিল এর প্রেক্ষিতে সৃষ্ট গৃহযুদ্ধে তুর্কি সহায়তার।
এই সামরিক সাহায্যের বিনিময়ে কাটাকুজিন নিজের কন্যা থিয়োডরাকে অর্থানের সাথে বিবাহ দিতে
আগ্রহ প্রকাশ করে। এই প্রস্তাব সাদরে তৎক্ষণাৎ গ্রহণ করা হয়। ১৩৪৫
খরিস্টাব্দে প্রায় ছয় হাজার অটোমান সৈন্য ইউরোপে প্রবেশ করে । এখানে তারা
কাটাকুজিনকে সাহায্য করে কৃষ্ণ সাগরের উপকূল অঞ্চলসমূহ দখল করতে,
থেস লুঠ করতে, আদ্রিয়ানোপলকে ভয় দেখাতে এবং কনস্টান্টিনোপলকে
অবরোধ করতে ।
পরের বছরই ইউরোপীয়ান তীরভূমি মেতে ওঠে বাইজেন্টাইন রাজকুমারী
এবং অটোমান সুলতানের জাকজমকপূর্ণ বিবাহোতৎসবে ৷ অর্থান স্কুটারি-র
বিপরীতে তাবু ফেলে ব্রিশটি তুর্কি জলযানের এক বিশাল ফ্রিটি পাঠান
অশ্বরোহী সৈন্যদল যোগে তার নববধূকে নিয়ে আসার জন্য । সেলিমব্রিয়াতে
সম্রাটের তাবুটিও সজ্জিত করা হয়েছিল মহামূল্যবান কার্পেট দিয়ে। এক্ষেত্রে
গিবন লিখে গেছেন “বেগুনি রঙের প্রতি অসম্মান।”
থিয়োডোরা এমন একটি সিংহাসনে বসেন, যেটির চারপাশে ছিল সিক্ষ
আর স্বর্ণের পর্দা। সৈন্যরাও ছিল অস্ত্রবিহীন কিন্তু সম্রাট একাই ছিলেন ঘোড়ার
ওপর আসীন। একটি মাত্র নির্দেশের সাথে সাথে পর্দা উঠিয়ে ফেলা হয়।
নববধূ বা বলির পাঠাকে উন্মুক্ত করা হয় সবার সামনে ।
চারপাশে হাটু গেড়ে
বসেছিল নপুংসকের দল, বাশি আর বাজনার সুরে এই আনন্দময় ঘটনার
ঘোষণা হচ্ছিল আর রাজকুমারীর খুশির অভিনয় বয়ান করছিলেন এমন সব
কবি যাদের বয়সের কোনো গাছ-পাথর নেই। কোনো রকম গির্জার অনুষ্ঠান
ছাড়াই থিয়োডরাকে তার বর্বর প্রভুর হাতে তুলে দেয়া হয়।
কিন্তু এটি সুনিশ্চিত করা হয় যে থিয়োডরা বার্সার হারেমে গিয়েও নিজের ধর্ম পালন
করতে পারবে? এই ধরনের একটি অস্পষ্ট দ্যর্থবোধক অবস্থাতেও তার পিতা
কন্যার দয়া এবং উৎসর্গীকৃতের অনুষ্ঠান উদ্যাপন করেন।
বস্তুত এর মাধ্যমে থিয়োডরা অগুণতি খ্রিস্টান দাস এবং বন্দিদের ক্রয়
করে মুক্ত করে দেন।
পরবর্তীতে অটোমানদের সাথে এই বিবাহ এবং সামরিক মৈত্রী জোটের
মাধ্যমে ১৩৪৭ খ্রিস্টাব্দে কাটাকুজিন কনস্টান্টিনোপলে প্রবেশ করে নিজের
ছোট কন্যা হেলেনার বিয়ে দেয় তরুণ জন পালাইয়েলগের সাথে এবং উভয়ে
যৌথ সম্রাট হিসেবে স্বীকৃতি পায়।. এভাবে অটোমান তুর্কিরা ইউরোপে পা
রাখে শক্র হিসেবে নয়, বরং মৈত্রী হিসেবে এবং বলা যায় বাইজেন্টাইন
ব্যবসায়ীদের আত্মীয় হিসেবে । তাদের সুলতান ছিলেন একজন সম্রাটের
জামাতা এবং অপর সম্রাটের ভগ্নিপতি । এছাড়াও তিনি ছিলেন পার্বতী
বুলগেরিয়ার জারের জামাতা ।