দ্যা আটোম্যান সেঞ্চুরিস পর্ব ১৮
যখন সময় আসে বৃহৎ এবং ভয়ানক কারামানিয়ার অঞ্চলসমূহকে নিয়ন্ত্রণ
করার, মুরাদ কুতাইয়াতে বায়েজীদের নেতৃত্বে সৈন্য সমাবেশ করেন। এদের
মাঝে ছিল গ্রিক, সাবীয়া ও বুলগেরিয়ার সৈন্যরা । এদের চালনা করা হতো
সম জন ও সৈন্যদের নিজ নিজ শাসনকর্তার সাথে করা শান্তিচুক্তির
সহায়তায় । ১৩৮৭ সালে বাধে যুদ্ধ। কন্যার আগে অবস্থিত সমভূমিতে ৷ এর
ফলাফল অমীমাংসিত প্রমাণিত হয়, কেননা উভয় পক্ষই জয়ের দাবি করতে
থাকে । মুরাদ কোনো অঞ্চল পাননি, কোনো লুষ্ঠন্দ্রব্য, সামরিক সহায়তা বা
কারো নিশ্চয়তা কিছুই পাননি । বলকান খ্রিস্টানদের বিপক্ষে জয়ী মুরাদ
এভাবেই তার সমকক্ষ মুসলিম রাজকুমারের দেখা পান এবং এশিয়াতে নিজের
রাজসীমা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অকৃতকার্য হন।
পরোক্ষভাবে এই যুদ্ধ তাকে বলকানে আরেকটি অভিযানে নিযুক্ত করে।
এশিয়া মাইনরের মুসলিমদেরকে অসন্তুষ্ট না করার জন্য মুরাদ নিজের
সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন কোনো প্রকার লুটপাট বা হাঙ্গামা না করতে। কিন্তু
এই নির্দেশ সাবীয়ার সেনাবাহিনীর যে অংশ মুরাদের সেনাবাহিনীতে কাজ করে
৫
তাদের খেপিয়ে তোলে; যারা লুণ্ঠনদ্রব্যকে যুদ্ধের নিয়মানুযায়ী সৈনিকের প্রাপ্য
বলে মনে করে। এভাবে তাদের অনেকেই এ নিয়মের লঙ্ঘন করে আর
এবং তাদের সাথিদের সাথে করা দুর্যবহারের দাওয়াই খুঁজতে থাকে৷ এই
সুযোগে সাবীয়ার রাজকুমার লাজার এক ধরনের প্যান-সার্বীয়ান মৈত্রী জোট
উপকূলে অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এর উত্তরে অটোমানরা ভার্ভার নদী পার
হতে গিয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, পরাজিত হয় এবং সেনাবাহিনীর চার-
পঞ্চমাংশ অংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অটোমান বিজয়গাথার এই ছন্দপতনে
ওয়ালাসিয়া, হাঙ্গেরি প্রভৃতি রাষ্ট্রসমূহ বন্য উল্লাসে মেতে ওঠে । সবাই এসে
লাজারের পাশে একত্রিত হয়, যা পূর্বে আর কখনোই হয়নি। সবাই একই
লক্ষ্যে অগ্রসর হয় আর তা হলো ইউরোপ থেকে তুর্কিদেরকে বিতাড়িত
করা।
মুরাদ এশিয়া মাইনরেই থেকে যায়। নিজের পরাজয়ের জন্য তাড়াহুড়া
করে কোনো প্রতিশোধ গ্রহণে অগ্রসর না হয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। এটা
দেখাই ছিল তার উদ্দেশ্য যে শক্ররা প্রাথমিক উল্লাস আর আত্মবিশ্বাস ভেঙে
যাওয়ার পরে কতটা দিন একত্রিত থাকতে পারে। পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং নিজের
রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবলে মুরাদ ভালোভাবেই জানতেন যে স্ত্রাভ জাতিসমূহের
মাঝে সৌহার্দ্য দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
এভাবে সাবীয়দের বিরুদ্ধে আরো একবার অগ্রসর হওয়ার পূর্বে ১৩৮৮
সিসমান শেষ একবার চেষ্টা করেন অটোমানদের প্রতিহত করতে । কিন্তু
অটোমান শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে বন্দি হন। ফলাফলস্বরূপ অটোমান
সেনাবাহিনী দানিধুবের উপরেই উত্তর এবং মধ্য বুলগেরিয়াতে শাসন প্রতিষ্ঠা
করে। দানিযুর নদীর তীরবর্তী অবস্থিত বিভিন্ন দুর্গের শাসন ক্ষমতা নিয়ে
বলকান পার্ধত্যাঞ্চলে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেয় অটোমান সৈন্যরা ।
কাজকুমার সিসমানের অবস্থান আর এতটা শক্তিশালী থাকে না, যার মাধ্যমে
তিনি স্রাভ বন্ধু রাষ্ট্রকে সহায়তা করতে পারেন।
এভাবে বুলগেরিয়া জয় করে সন্তর বছর বয়সে বিশাল সেনাবাহিনীর
নেতৃত্ দিয়ে সুলতান মুরাদ সাবীয়ার দিকে অগ্রসর হন। স্বাধীন সা্বীয়ার ভাগ্য
নির্ধারণের এই যুদ্ধ হয় কসোভোর জনশূন্য প্রান্তরে কৃষ্ণপাখির সমভূমিতে
(জাতে 06 1079 01901001-09)-এ স্থানটিতে সাবীয়া, বসনিয়া, আলবেনিয়া
এবং হারজেগোভিনার সীমান্ত এক হয়ে মিশেছে। সাবীয়া ও তার মিত্র শক্তির
৫৩
তুলনায় অটোমান সেনাবাহিনী সংখ্যায় ছিল কম, কিন্তু নৈতিকভাবে ও
আত্মবিশ্বাসে ছিল ভরপুর । মুরাদ বিজয় নিয়ে এতটাই নিশ্চিত ছিলেন যে
শহর বা গ্রাম ধ্বংস না হয়। একটি সমৃদ্ধ দেশের অধিকার পাওয়ার জন্য এর
সম্পদ ঘাতে না নষ্ট হয়, সেদিকে কড়া নির্দেশ ছিল তার।
অন্যদিকে সাবীয়ানদের মাঝে পারস্পরিক বিশ্বাসের অভাব ছিল এবং
নিজের সেনাবাহিনীতে বিশ্বাসঘাতকও ছিল। যুদ্ধের প্রাককালে এক প্রকাশ্য
বন্তৃতায় রাজুকমার লাজার যার মাঝে সব সময় প্রশাসনের কমতি ছিল, এখন
আত্মবিশ্বাসেরও অভাব দেখা যায়, নিজের জামাতাকে রাজদ্রোহী আখ্যা দেন।
মুরাদ বাতাসের গতিপথ নিয়ে সংশয়ে ছিলেন। বাতাস শক্রর দিক থেকে
বইছিল, অটোমানদের চোখে তাহলে ধুলা পড়ার আশঙ্কা ছিল। প্রমাণ আছে
যে, সারা রাত্রি জুড়ে তিনি স্বীয় আশ্রয়ের জন্য প্রার্থনা করেন এবং সত্যিকার
বিশ্বাসের জন্য শহীদের মতো মৃত্যু কামনা করেন।
পরদিন সকালে বাতাস থেমে যায়। অটোমান সেনাবাহিনী নিজস্ব রীতিতে
যুদধক্ষেত্র প্রস্তুত করে । মাঝখানে থাকেন সুলতান জানিসারিস ও অশ্বারোহীদের
দিকে ছোট সন্তান ইয়াকুব নিজের এশীয় সেনাবাহিনী নিয়ে পিতার পাশে যুদ্ধ
করতে প্রস্তুত হন। দুই হাজার তীরন্দাজ অটোমানদের পক্ষ থেকে প্রথম
আক্রমণ করে । সাবীয়রা প্রতিউত্তরে এত প্রচণ্ড আক্রমণ করে অটোমানদের
বাম পাশ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বায়েজীদ ডান পাশ থেকে সরে এসে তুমুল
আক্রমণ করেন এবং ব্যক্তিগতভাবে শক্রুদের ধ্বংস করতে থাকেন। লাজারের
অপর জামাতা, হতে পারে মুরাদের সাথে তার পূর্ব ব্যবস্থা করা ছিল যুদ্ধক্ষেত্র
থেকে নিজের বারো হাজার সৈন্য নিয়ে চলে যান। তার পিছু হটার ঘটনা
সা্বীয়দের এতটাই দুর্বল করে ফেলে যে তারাও নিজেদের অবস্থান থেকে
পালিয়ে যায়।
যুদ্ধক্ষেত্রে স্রাবদের অনৈক্য নিয়ে মুরাদের পূর্ব ধারণা সঠিক বলে প্রমাণিত
হয়। কিন্তু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা আক্ষরিক অর্থেই মঞ্জুর হয়েছিল৷ যুদ্ধক্ষেত্রেই
তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই মর্মান্তিক বেদনাবিধুর ঘটনার বিভিন্ন ব্যাখ্যা
আছে। যা পাওয়া গেছে বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের মাধ্যমে । ঘটনাটি
ঘটিয়েছে লাজারের জামাতা । নিজের শ্বশুরের কাছ থেকে যে রাজন্রোহী তকমা
পেয়েছিল। নিজের বিশ্বস্ততা প্রমাণের জন্য কাজটি করে সে। অটোমান
সেনাবাহিনীতে পালিয়ে যাওয়ার ভান করে লাজারের জামাতা মুরাদের কাছে
নিজের পদমর্যাদা অনুযায়ী একটি উচ্চ পদ দাবি করেন। যখন মুরাদ এ দাবি
thanks