গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ ও গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

প্রত্যেকটি নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে অন্তঃসত্ত্বা মুহূর্ত। গর্ভধারণের প্রথম সময়টায় নারীদের শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। গর্ভধারণের লক্ষণ সবার ক্ষেত্রে সমান হয় না। গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় প্রথম সপ্তাহে কিছু লক্ষণ কমবেশি সব নারীর ক্ষেত্রে দেখা যায়। আসুন জেনে নিই কী সেই লক্ষণগুলো-

১. রক্তক্ষরণ ঋতুচক্রের মতোই ৬ থেকে ১২ দিন হালকা রক্তপাত হতে পারে। এই লক্ষণ দেখলে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা অবশ্যই করে নিন।

২. প্রথম সপ্তাহে মুখে অন্য রকম স্বাদ বুঝতে পারবেন।  অনেক সময় মুখে দুর্গন্ধও হতে পারে। আসলে গর্ভাবস্থার জেরে শরীরে হরমোনের মাত্রার তারতম্যের কারণেই এই তফাৎ হতে পারে।

৩. গর্ভে সন্তান এলে নারীরা অতিরিক্ত পরিমাণে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। তিনি গর্ভবতী হয়েছেন এমন স্বপ্নই দেখেন তারা। 

৪. অনেক সময় মুখে বা হাত-পায়ে কালো কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা য়ায়। গর্ভধারণের সময় ত্বকের সংবেদনশীনতা বেড়ে যায়। এর ফলে চেহারায় এই কালো দাগ-ছোপ দেখা যায়।

৫. ক্লান্তি প্রেগন্যান্সির একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। যেহেতু শরীর এই সময় বাড়ন্ত শিশুকে পুষ্টি দেয়ার জন্য অতিরিক্ত রক্ত উৎপন্ন করে তার জেরে খুব অল্পতেই ক্লান্তি এসে যায়। 

৬. প্রেগন্যান্সির সময় শরীর অতিরিক্ত পরিমাণ তরল উৎপাদন করে। আর তার জেরে কিডনি দ্বিগুণ পরিমাণে কাজ করে। আর সে কারণেই অতি ঘন ঘন শৌচাগারে যাওয়া প্রয়োজনীয় হয়। 

৭. গর্ভাবস্থায় মাথার যন্ত্রণা হতে পারে। গর্ভধারণ করার প্রথম সপ্তাহের শুরুতেই মাথাব্যথা শুরু হতে থাকে। হরমোনের মাত্রা শরীরে বেড়ে যাওয়ার কারণেই এ সমস্যা হয়।

তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই

বিস্তারিত আলোচনা

১. গর্ভরোপণ, রক্তপাত এবং খিঁচুনি

মাসিকের খিঁচুনি, হালকা রক্তপাত, এবং দাগ লাগা যা গর্ভরোপণের রক্তপাত নামে সাধারণত অভিহিত হয় তা গর্ভাবস্থার কিছু প্রাথমিক ও স্পষ্ট লক্ষণ। নিষিক্ত ডিম নিজেকে জরায়ুর দেওয়ালে সংযুক্ত করে যার ফলে গর্ভরোপণ হয়। যদি আপনার মাসিক চক্র নিয়মিত থাকে, তবে গর্ভরোপণ রক্তপাতের লক্ষণগুলি পিরিয়ড মিস করার এক সপ্তাহ বা ওইরকম সময় আগে ঘটে। এটি কয়েক ঘন্টা বা এমনকি কয়েক দিনের জন্য স্থায়ী হতে পারে। এটি অন্তর্বাসে বা যোনিদ্বার মোছার সময় কাপড়ে রক্তের কয়েকটি ফোঁটা হিসাবে দেখা যেতে পারে। তবে, অত্যধিক রক্তপাতের লক্ষণগুলির দিকে নজর রাখুন, যা গর্ভপাত বা পিরিয়ড হতে পারে।

২. শরীরের মৌলিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া

বাকী উপসর্গের চেয়ে প্রায়শই বেশী সঠিক, মৌলিক দেহ তাপমাত্রা অনেক মাস ধরে নজরদারি করতে হবে যাতে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সনাক্ত করা যায়। ডিম্বস্ফোটনের আগে, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং আপনার পিরিয়ড চক্রের পরে স্বাভাবিকে ফিরে আসে। কিন্তু গর্ভাবস্থাযর পুরো সময় জুড়ে, শরীরের মৌলিক তাপমাত্রা বেশী থাকার প্রবণতা থাকে। গর্ভরোপণ হয়ে গেলে, সিস্টেমের মধ্যে একটি নতুন জীবনকে জায়গা দেওয়ার জন্য শরীর নিজেকে প্রস্তুত করে, যার ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ইমিউন সিস্টেম গর্ভকালীন সময়টি পার করার জন্য নিজেকে পুনরায় সাজিয়ে নেয়। ডিম্বস্ফোটনের পর আপনার দেহের তাপমাত্রা যদি 20 ২০ দিনের বেশী সময় ধরে বেশী থাকে, তবে এটি একটি নতুন যাত্রার সূচনাকে চিহ্নিত করে।

৩. ব্যাথাযুক্ত, কোমল এবং ভারী স্তন

ব্যাথাযুক্ত, কোমল, ভারী স্তন বা গাঢ়তর এরিওলা হল পিরিয়ড মিস করার এক সপ্তাহ আগে লক্ষনীয় গর্ভাবস্থার লক্ষণ। গর্ভধারণের পর এস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে, মহিলারা স্তনে ব্যথা, পূর্ণতা অনুভব করেন এবং স্তনে তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করেন। স্তনবৃন্ত গাঢ়তর দেখায় এবং সেগুলিতে চুলকানি ভাব, উত্তেজনা বা খোঁচা খোঁচা ভাব অনুভূত হয়। এই লক্ষণগুলি আবার মাসিক পূর্ববর্তী স্তনের লক্ষণগুলির থেকে খুব একটা আলাদা নয়, তবে আপনার পিরিয়ড মিস হয়ে যাওয়ার পরেও এগুলি দেখা যাবে।

৪. অবসাদ এবং ক্লান্তি

হরমোনের পরিবর্তন আপনাকে সারাক্ষণ ক্লান্ত এবং অবসন্ন রাখবে। অবসাদ এবং ঘুম ঘুম ভাব গর্ভবতী হওয়ার প্রাথমিক চিহ্ন। ছোট টুকিটাকি কাজ করার পর ক্লান্ত বোধ করা অত্যন্ত স্বাভাবিক। প্রজেস্টেরোনের মাত্রাকে ঘুমানোর প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয় এবং প্রথম ত্রৈমাসিকের পুরো সময়টিতে এরকমই থাকবে। শরীর বাড়তে থাকা ভ্রূণের জন্য আরও রক্ত উৎপাদন করতে শুরু করে যার ফলে ক্লান্তির বৃদ্ধি ঘটে। এর সাথে মোকাবিলা করতে খনিজ, ভিটামিন, লোহা এবং প্রচুর পরিমাণে তরল সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাদ্য খেতে হবে।

৫. বমি বমি ভাব

বমি ভাব বা বমি করা, একটি খুব সাধারণ উপসর্গ, যাকে প্রায়ই “সকালের অসুস্থতা” বলা হয়, এটি একটি স্পষ্ট উপসর্গ এবং আপনি যে গর্ভবতী তা নির্দেশ করতে পারে। গর্ভধারণের কয়েক দিনের মধ্যে, আপনি অস্বস্তি এবং বমি বমি ভাব অনুভব করতে পারেন। এস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরোনের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে, আপনি প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার পর আপনার বমি হবে মনে হতে পারে। বমি বমি ভাব শুধু সকালেই হবে এমন নয়, এটি যে কোনো সময় এবং সারা দিন জুড়ে হতে পারে এবং সবকটি ত্রৈমাসিক ধরে চলতে পারে। প্রায় 80৮০% গর্ভবতী মহিলা পিরিয়ড মিস করার আগের প্রাথমিক সপ্তাহগুলিতে বমি বমি ভাবে ভোগেন। সকালের অসুস্থতা বা বমিভাবের লক্ষণগুলির তীব্রতা বিভিন্ন মহিলাদের মধ্যে বিভিন্ন হয়, তবে 50৫০% গর্ভবতী মহিলা গর্ভধারণের ছয় সপ্তাহের মধ্যে বা আগেও বমিভাব বোধ করে।

৬. খাদ্যের আকাঙ্ক্ষা, গন্ধের প্রতি বিতৃষ্ণা এবং সংবেদনশীলতা

গর্ভাবস্থার হরমোনগুলি আপনার প্রিয় খাবারগুলি আকাঙ্ক্ষা করার ক্ষেত্রে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে এবং এটি কিছু গন্ধের প্রতি বিতৃষ্ণা জাগাতে পারে। গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া, স্বাদ কটু লাগা এবং খাদ্যের প্রতি বিতৃষ্ণা জাগা গর্ভধারণের পর প্রাথমিক সপ্তাহগুলিতে ঘটে এবং সম্পূর্ণ গর্ভাবস্থায ধরে চলতে পারে বা নাও চলতে পারে। কিছু হবু মায়েদের এমনকি পিরিয়ড মিস করার আগে ক্ষুধা হারিয়ে যায়।

৭. পেট ফোলা এবং আঁটসাঁট ভাব

পিরিয়ড মিস করার আগে গর্ভধারণের সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গগুলির মধ্যে একটি হল পেট ফোলা বা পেট কনকন করা এবং টান ধরা। এটি প্রজেস্টেরোনের বৃদ্ধির ফল। হরমোনের বর্ধিত মাত্রা পাচনকে বাধা দেয় যার ফলে অন্ত্রে গ্যাস আটকে থাকে। বেড়ে যাওয়া পেটের জন্য কোমরের চারপাশের জামাকাপড় আঁটসাঁট হয়ে যায় এবং ফলে অস্বস্তি হতে পারে। পেট ফুলে অপ্রীতিকর বাতকর্ম এবং ঢেঁকুর হতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাওয়া এবং নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করলে যে কোনো অস্বস্তি মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে।

৮. প্রস্রাব করার তাড়ন

ঘন ঘন প্রস্রাব পাওয়া আরেকটি বিশিষ্ট চিহ্ন। ক্রমবর্ধমান জরায়ু মূত্রাশয়ে ধাক্কা দিতে শুরু করলে, তখনই শুধুমাত্র এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়তে থাকবে। হরমোন পরিবর্তন এবং রক্তের অতিরিক্ত উত্পাদনের সাথে, ঘন ঘন প্রস্রাব একটি সাধারণ উপসর্গ যা সমগ্র গর্ভাবস্থা ধরে চলতে থাকবে। রক্তের ফিল্টার করার জন্য কিডনি অতিরিক্ত সময় কাজ করে, ফলে বার বার প্রস্রাব করার ইচ্ছা সৃষ্টি হয়। প্রায় সব গর্ভবতী মহিলারা এই তাড়নটি অনুভব করেন যা গর্ভাবস্থার প্রথম দিকের লক্ষণগুলির মধ্যে একটি। আপনার পিরিয়ড মিস হওয়ার সময় থেকে এটি ঘটতে শুরু করে।

৯. মেজাজের হেলদোল

হরমোনের পরিবর্তনের ফলে আপনি হয় খুব প্রফুল্ল অথবা খুব মনমরা থাকবেন। আপনার পিরিয়ড মিস করার আগে আরেকটি প্রাথমিক চিহ্ন, মেজাজের হেলদোল রহস্যময় উপায়ে কাজ করে, এবং আপনি ক্ষুদ্রতম বা তুচ্ছ সমস্যা নিয়েও চেঁচিয়ে উঠবেন। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটারগুলিকে প্রভাবিত করে, যার ফলে ক্রোধ থেকে শুরু করে হঠাৎ আবেগে ফেটে পড়া পর্যন্ত আবেগ প্রকাশের বৃদ্ধি ঘটে। আপনি স্বাভাবিক বোধ না করলে আরাম করার এবং বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কিছু সময় নিন।

১০. মাথা ঘোরা

মাথা ঘোরা এবং হালকা মাথার অনুভূতি গর্ভাবস্থার প্রাথমিক উপসর্গ যা অনেক হবু মায়েদের দেখা দেয়। রক্তবাহী নালীগুলি স্ফীত হয়ে যায়, ফলে রক্তচাপ হ্রাস পায় যার ফলে মাথা ঘোরা এবং ভারসাম্যহীনতার অনুভূতি হয়। এই উপসর্গ প্রথম ত্রৈমাসিক জুড়ে চলতে থাকে এবং পরবর্তী পর্যায়ে ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। যাইহোক, মাথা ঘোরার সাথে যদি যোনিদ্বার থেকে রক্তপাত এবং পেট ব্যথা হয়, তাহলে আপনার অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

১১. কোষ্ঠকাঠিন্য

প্রোজেস্টেরোন হরমোন পায়খানা শক্ত করে দেয় এবং যদি আপনি পায়খানা করতে না পারেন, তবে এটি গর্ভাবস্থার প্রাথমিক চিহ্ন হতে পারে। হরমোনের দৌড়ের জন্য পায়খানা শক্ত হয়ে যায় এবং পাচন তন্ত্রের মধ্যে দিয়ে যে গতিতে খাবার বাহিত হয় সেই গতি কমে যায়। আপনি যদি পিরিয়ড মিস করার পর এক সপ্তাহের বেশী সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, তাহলে আপনার গর্ভাবস্থার পরীক্ষা করা উচিত।

১২. মাথা ব্যাথাব্যথা

মাথাব্যাথা মাথাব্যথা সবচেয়ে সাধারণ মাসিক পূর্ববর্তী উপসর্গ, তবে গর্ভধারণের পর, এস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরোন হরমোন শিশুর জন্য জরায়ুকে প্রস্তুত করতে অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করে। হরমোনগুলি রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় যার ফলে মাথা ব্যাথা ব্যথা করে, কারণ মস্তিষ্কের কোষগুলি কম মাত্রার চিনির সরবরাহের সাথে সঙ্গতি বজায় রাখতে সংগ্রাম করে।

১৩. ব্যাথা ব্যথা এবং যন্ত্রণা

হরমোনগুলি আপনার অভ্যন্তরে নতুন জীবনের জন্য স্থান তৈরির কাজ করে এবং এটি লিগামেন্টগুলিকে প্রভাবিত করে যেগুলির প্রসারিত হওয়ার প্রয়োজন হয়। লিগামেন্ট এবং জয়েন্টগুলি প্রসারিত করার ফলে মেরুদণ্ড এলাকায় ব্যথা হতে পারে, এটি আপনার পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে হয়।

১৪. মুখের মধ্যে অদ্ভুত স্বাদ

হরমোন অদ্ভুত খেলা খেলতে পারে এবং আপনি আপনার মুখের মধ্যে একটি অদ্ভুত বাজে স্বাদ অনুভব করতে পারেন। আপনি কোনো বিস্বাদ ধাতু খেয়ে ফেলেছেন বলে আপনার মনে হতে পারে। এই ধাতব স্বাদটি একটি প্রাথমিক চিহ্ন হতে পারে যা আপনাকে জানায় যে আপনি মাতৃত্বের পথে যাত্রা শুরু করেছেন। প্রথম ত্রৈমাসিকের পরে এই উপসর্গটি সাধারণত অদৃশ্য হয়ে যায়, তবে কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

১৫. অত্যধিক তৃষ্ণা বা প্রচন্ড খাবার প্রবণতা

যদি দেখেন যে আপনি গ্যালন গ্যালন জল খাচ্ছেন তাহলে বিস্মিত হবেন না।  রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে আপনি আপনার পিরিয়ড মিস করার আগেও অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত বোধ করতে পারেন। হরমোন স্ফীতির জন্য আপনি সবসময় ক্ষুধার্ত এবং বুভুক্ষিত অনুভব করতে পারেন।

১৬. সার্ভিকাল মিউকাসের পরিবর্তন

সার্ভিকাল মিউকাসের বৃদ্ধি, গর্ভাবস্থার একটি প্রাথমিক নির্ণায়ক। গর্ভধারণের পরে, সার্ভিক্যাল মিউকাস ঘন এবং ক্রিমের মতো দেখাবে এবং আপনার পিরিয়ড মিস না হওয়া পর্যন্ত এই রকমই থাকবে। এছাড়া আপনি প্রস্রাব করার সময় ছুঁচ ফোটার মতো অনুভব করতে পারেন বা আপনার যোনির চারপাশে চুলকানি এবং ব্যাথাও অনুভব করতে পারেন।

১৭. শ্বাসকষ্ট

শ্বাসকষ্ট গর্ভধারনের প্রাথমিক চিহ্ন হতে পারে কারণ দুটি জীবনের জন্য শ্বাস নেওয়ার জন্য, শরীরের আরও বেশী অক্সিজেন এবং রক্তের প্রয়োজন হয়। এটি শিশুর বাড়ার সাথে সাথে এবং আরো বেশী অক্সিজেন এবং পুষ্টির প্রয়োজনে সবকটি ত্রৈমাসিক ধরে চলতে থাকে।

১৮. মুখ দিয়ে লালা পড়া এবং লালা নির্গমন

যদিও এটি খুব সাধারণ উপসর্গ নয়, কিন্তু কিছু মহিলা পিরিয়ড মিস করার আগে অতিরিক্ত লালা উৎপাদন করেন। এই অবস্থাটি প্রাথমিকভাবে টিয়ালিস গ্রেডিডারম নামে পরিচিত, এটি সকালের অসুস্থতা এবং বুকজ্বালার সাথে সম্পর্কিত। বমিভাবের যন্ত্রণা থেকে মুখে অতিরিক্ত তরল সৃষ্টি হয় যার ফলে মুখ থেকে লালা পড়তে থাকে।

১৯. গরম ফ্লাশ

আপনার পিরিয়ড বাকী পড়লে বা যখন মেনোপজ শুরু হয়, তখন এটি একটি খুব সাধারণ ঘটনা, তবে গরম ফ্লাশ গর্ভাবস্থার একটি প্রাথমিক ইঙ্গিতও হতে পারে। যদি আপনার অঙ্গগুলিকে ঘিরে তাপ তরঙ্গ জড়িয়ে থাকে, তবে আপনার গর্ভবতী হওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।

২০. দাগ, ব্রণ এবং ফোড়া

প্রাক-মাসিক পর্যায়ে মাঝে মাঝে ব্রণ এবং ফোড়া হওয়া সাধারণ ব্যাপার। হঠাৎ উদ্গম হলে তা গর্ভধারণের পর হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির জন্য হতে পারে। তবে, বিপরীতটিও ঘটতে পারে। গর্ভাবস্থা আপনার পিরিয়ডের আগে ব্রণ হওয়া বন্ধ করে দিতে পারে এবং এটি শিশুর আগমনের চিহ্ন হতে পারে।

২১. উদ্ভট স্বপ্ন

গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহে আপনি আপনার পিরিয়ড মিস করার আগেই অবিস্মরণীয় স্বপ্ন আসতে পারে। গর্ভাবস্থার একটি অস্বাভাবিক উপসর্গ, বেশিরভাগ মহিলাদের গর্ভধারণ করার এক বা দুই সপ্তাহ পর অদ্ভুত অনুভূতি হয়। গর্ভাবস্থার হরমোনগুলি এলোমেলোভাবে কাজ করে যার জন্য একজন হবু মা ব্যাখ্যাতীত স্বপ্ন দেখতে পারেন এবং তাঁর বিভ্রম সৃষ্টি হতে পারে।

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান জন্মদানের প্রধান শর্ত গর্ভবতী মায়ের যথাযথ পরিচর্যা। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময় প্রসূতি নারীর খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, অনেক ক্ষেত্রে ওজন কমে যাওয়া ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। তাই পরিবারের সদস্যদের হবু মায়ের সুস্বাস্থ্য এবং সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে পাঁচ মাস থেকে ভ্রূণের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য মায়ের খাবারটা হওয়া চাই সুষম। সঙ্গে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং পর্যাপ্ত পানি যাতে থাকে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে।


যেমন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও পুষ্টি বোর্ড গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভের শেষের দুই মাস তাদের প্রয়োজনীয় আমিষের চাহিদার সঙ্গে অতিরিক্ত ২০ গ্রাম আমিষ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। এসব আমিষ উৎকৃষ্ট অর্থাৎ প্রাণীজ হওয়া বাঞ্ছনীয়। পাশাপাশি খাবারে যাতে ৫০০ মিলিগ্রাম অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ও ৫ মিলিগ্রাম লোহাও থাকে। ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত দুধ ও বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
এ ছাড়া ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’–এর অভাবে এ সময় অস্টিওম্যালেসিয়াম নামের অস্থি বা হাড়ের রোগ দেখা দেয়। এ ছাড়া এ সময় আয়োডিনযুক্ত খাবার যেমন সামুদ্রিক মাছ গর্ভবতী মায়ের খাদ্যে থাকা উচিত। কারণ আয়োডিন শিশুর বুদ্ধি বা মস্তিষ্কের বর্ধনের জন্য জরুরি। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে যেখানে গর্ভস্থ শিশুর ওজন প্রতিদিন বড়জোর ১ গ্রাম করে বৃদ্ধি পায়, সেখানে পাঁচ মাসের পর থেকে প্রতিদিন ১০ গ্রাম করে ওজন বাড়তে শুরু করে। গর্ভাবস্থার শেষ দুই মাস শিশুর মোট ওজনের অর্ধেক বৃদ্ধি পায়। সে জন্য মায়ের পুষ্টির দিকটা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।


প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা:

সকাল আটটা থেকে সাড়ে আটটা—রুটি চারটি অথবা পরোটা দুটি, একটি ডিম ও দুই কাপ সবজি।

১১টা থেকে সাড়ে ১১টা—২৫০ মিলিগ্রাম দুধ অথবা বাদাম ৬০ গ্রাম, বিস্কুট দুটি অথবা মুড়ি, যেকোনো একটি মৌসুিম ফল।

দুপুর—ভাত তিন কাপ (মাঝারি চায়ের কাপে), মাছ বা মাংস দুই টুকরো, সপ্তাহে একদিন সামুদ্রিক মাছ, শাকসবজি, সালাদ ও লেবু, ডাল এক কাপ।

বিকেল পাঁচটা থেকে ছয়টা—দুধ ২৫০ মিলিগ্রাম বা স্যুপ অথবা ৬০ গ্রাম বাদাম, বিস্কুট অথবা মুড়ি ৩০ গ্রাম অথবা নুডলস এক কাপ।

রাত—ভাত চার কাপ, মাছ বা মাংস অন্তত দুই টুকরো, সপ্তাহে একদিন সামুদ্রিক মাছ, শাকসবজি এবং এক কাপ ডাল।


খাদ্য সম্বন্ধে কিছু প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা:

বাড়ির অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ আছেন যিনি হবু মাকে বাড়তি খাবার খেতে নিষেধ করেন। তাঁদের ধারণা বাড়তি খাবার খেলে পেটের সন্তান বড় হয়ে যাবে। আর বড় হয়ে গেলে সিজার করতে হবে। ফলে মা অপুষ্টিতে ভোগেন এবং শিশু কম ওজন নিয়ে অপরিণত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়। এটা একেবারেই ঠিক নয়। এ ছাড়া মাকে কিছু পুষ্টিকর খাবারের বিষয়ে ভ্রান্ত ধারণা দেওয়া হয়। যেমন মৃগেল মাছ খেলে সন্তানের মৃগী রোগ হয়। বোয়াল মাছ খেলে সন্তানের চোয়াল অনেক বড় হয়। শিং বা শোল মাছ খেলে সন্তানের দেহ সর্পাকৃতির হয়। শসাজাতীয় কোেনা সবজি খেতে দেওয়া হয় না, বলা হয়—সন্তানের দেহের চামড়া ফাটা ফাটা হবে। কলা খেলে ঠান্ডা লাগবে।চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণের সময়সারা দিন মাকে না খাইয়ে রাখা হয়। ইত্যাদি অগণিত ভ্রান্ত ধারণা আছে—যা শুধু ভ্রান্তই। তা হবু মায়ের অপুষ্টিরও একটি কারণ।
লেখক: প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিস জেনারেল হাসপাতাল

তথ্যসূত্র: প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button